Saturday, June 11, 2016

সীমান্ত থেকে সীমান্তে কাঁটাতার পেরিয়ে

হয় ইউরোপ নয় মৃত্যু-----------------তৃতীয় পর্ব

সীমান্ত থেকে সীমান্তে কাঁটাতার পেরিয়ে


সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম



ঢাকা: উন্নত জীবনের আশায় নিজের দেশ ছেড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানো মানুষের স্রোত যেমন এখনও চলছে। তেমনি সাইপ্রাস থেকে বাংলাদেশীসহ অনেক শিক্ষার্থী উন্নত জীবনের আশায় পশ্চিমা দেশগুলোতে যেতে মরিয়া। সাইপ্রাসে কাজ না থাকা, আর অতিরিক্ত টিউশন ফি ও দালালের প্রতারণায় পড়ে তারা সীমান্তে অবৈধ উপায়ে কাঁটাতার কেটে জঙ্গলে মাইলের পর মাইল হেটে ইউরোপে ঢুকছে।

সমুদ্রে যেভাবে লিবিয়াকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ধরে ইউরোপ যাচেছ অভিবাসীরা তেমনি স্থলপথে সাইপ্রাস হয়ে উঠেছে আরেক ট্রানজিট রুট।

এবার এ পথে ছুটেছেন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান। গেল ফেব্রুয়ারিতে তিনি পা বাড়িয়েছেন এই বিপদ সংকুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ পথে। আব্দুর রহমান বাংলাদেশ থেকে সাইপ্রাস গিয়েছিলেন। যাবার আগে তাকে ট্রাভেল এজেন্সি বলেছিলো, ওখানে পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জনের অনেক সুযোগ আছে আর খুব সহজেই ভিসা ছাড়াই ইউরোপে চলে যেতে পারবে। কিন্তু না সাইপ্রাস এসে সব ভুল আর পদে পদে দালালের খপ্পরে পড়ে আব্দুর রহমান এখন ইউরোপের পথে। তারে এই যাত্রার বাঁধা কাঁটাতারের পর কাঁটাতার। সীমান্তের পর সীমান্ত। বনজঙ্গল আর বরফ কাঁদা মাড়ানোর এক পথ।

প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লেগেছে শুধু তাকে সাইপ্রাস যেতে। কিন্তু মাত্র তিন চার লাখ টাকায় সাইপ্রাস আসার লোভ তাকে দেখিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কিন্তু আসার পর দেখা যায় সাইপ্রাসে টিউশন ফি অনেক বাকি। সঙ্গে লাগে থাকা খাওয়ার টাকাও উপার্জনের চাপ। মাত্র ৬ মাস এভাবে সাইপ্রাস থেকে আর বহন করতে না পেরে ইউরোপের উন্নত জীবনের স্বপ্নে মৃত্যুঝুঁকির পথে রওয়ানা দেন আব্দুর রহমান।
 
সাইপ্রাস থেকে বাংলাদেশী এক দালালের মাধ্যমে ২৪ শ ইউরো দিয়ে প্রথমে সাইপ্রাস থেকে বিমানপথে বুলগেরিয়া যান আব্দুর রহমান।

সাধারণত বুলগেরিয়া যেতে ২ থেকে ৩ শ’ ইউরো লাগে কিন্তু বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রকে ঢুকতে দেয় না বলে এয়ারপোর্ট চুক্তিতে তার ২৪০০ ইউরো খরচ হয়েছে। এক্ষেত্রে এয়ারপোর্টে তার কথা আগেই বলে দেয় দালাল। যে কারণে আলাদাভাবে তারি ইমিগ্রেশন হয় এবং ছেড়ে দেয়া হয়।

কিন্তু বুলগেরিয়ে গেলে সহজেই ১৫০০ ইউরো দিয়ে মধ্যে অস্ট্রিয়ায় যেতে পারবে আর সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে ইতালি অথবা জার্মানি সহজেই যেতে পারবে-এমন লোভ দেখিয়ে তাকে বুলগেরিয়া নিয়ে আসে দালাল চক্র।


কিন্তু বুলগেরিয়া আসার পর এখানের দালাল চক্র তাকে জানায় কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার ইউরো লাগবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যেতে। প্রায় ১৫ দিন বুলগেরিয়ে অবস্থান করে শেষে ৩ হাজার ইউরোতে ভিয়েনা যাবার চুক্তি হয় দালালের সঙ্গে। ওই দালাল তাকে জানায় বর্ডারে গিয়ে ২০ মিনিট হাটলেই অস্ট্রিয়া। কিন্তু বাস্তবে দালালের কথার সঙ্গে কোন মিল পাচ্ছেন না আব্দুর রহমান।

এখন দালাল তাকে আরেক পাকিস্তানী দালালের হাতে তুলে দিয়েছে। পাকিস্তানী দালাল তাকে ‘গেইমে’ অন্তভূক্তি করেছে। এখানে গেইম মানে ৫০ জনের একটি গ্রুপ। এই গ্রুপকে ভিয়েনায় পাঠানোকে দালালরা গেইম বলে।

সেই গেইমে আব্দুর রহমান সহ কয়েকজন বাংলাদেশী আর বাকি সবাই পাকিস্তানী। বাংলাদেশে যেসব ‘ঔষদের জরুরী গাড়ি’ দেখা যায় সেরকম চারদিক বন্ধ করা একটি গাড়িতে তুলে দুই ঘন্টা পর বর্ডারে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের।

পরের প্রতিবেদনে পড়ুন সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়া জেল এবং এরপর মিলানে যাত্রার কাহিনী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ০২ এপ্রিল ২০১৬
এসএ/


No comments:

Post a Comment