জকিগঞ্জ
(সিলেট) থেকে ফিরে: বরাকের নামা ঢল দ্রত বেগে ছুটছে। কানে বাজছে নদীর
দুই পাড়ের কোলাহলের ধ্বনি। দুই পাড়ের মসজিদের আজান আর মন্দিরের ঘন্টা সব চলছে নিয়মমত।
ওপরে যে আকাশ তাও একই রঙ্গের। দুই পাড়ের মানুষের কথাবার্তায় কোন অমিল নেই। এমনকি উচ্চারণেও
হেরফের হয় না। তবু আলাদা দুটি রাষ্ট্র। যার সীমান্ত টানা হয়েছে নদী ওপর । কুশিয়ারার এপার বাংলাদেশ
ওপার ভারত।
যেখানে দাঁড়িয়ে এই বর্ণনা তার ওপারে ভারতের করিমগঞ্জ আর
এপারে বাংলাদেশের জকিগঞ্জ। বাংলাদেশের সব উত্তরপূর্ব- সিলেটের জকিগঞ্জ। এরপর ভারত।
ভাগ হয়েছিলো ১৯৪৭ এ। অথচ ওপারের করিমগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ ভোটে রায় দিয়েছিলো
এপারের সঙ্গেই থাকতে। তাদের সেই ভোটের রায় না মেনে রেকক্লিফের সীমানা কমিশন তাদেরকে
ভারতের একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর (অসমীয়া) বসতির সঙ্গে মিলিয়ে দেন। এখনও এই ‘সিলেটি ইন্ডিয়ান’
বলে পরিচিত করিমগঞ্জ ও পাশ্ববতী মানুষের ভারতে তাদের বাংলাদেশ থেকে আসা হিসেবে চিন্তিত
করা হচ্ছে।
অথচ ভারতের আসামের সঙ্গে নয়! কথাবার্তা, আচার-আচরণ, খাবার-দাবার,
আপ্যায়ন, বাড়ি-ঘর সব কিছুই সিলেটি সংস্কৃতির অবিকল প্রতিরূপ করিমগঞ্জ বদরপুর শিলচরে।
ঐতিহাসিক এই ভুলের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এখন অনেকটা
মিলিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু অনিয়মটা যে এখনও ভোগাচ্ছে তার উদাহরণ ভুরি ভুরি। সেই বঞ্চনার
ক্ষত এখনও রয়ে গেছে। ৪৭ সালের ১২ আগস্ট রেডক্লিফ সিলেটের গায়ে ছুরির আঁচড়ে একই পরিবারে
দুইভাগ করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
ভারত-পাকিস্তান সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে রেডক্লিফের পেনসিল
কুশিয়ারার বাঁকের সাথে মিলে গিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তিন থানা (পাথারকান্দি, বদরপুর, রাতাবাড়ি থানা এবং
করিমগঞ্জ থানার অধিকাংশ) আসামকে ছেড়ে দিতে হয় সিলেটকে। করিমগঞ্জের বাকি অংশ জকিগঞ্জ
নামে টিকে থাকে সিলেটের সাথে। আবার ভারতে রেখে
মৌলভীবাজারের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কমলগঞ্জকে পাকিস্তানে ঢুকিয়ে
দাগ টেনে দেন। এ সময়ের মাঝে পাকিস্তান পর্বের ইতি ঘটিয়ে স্বাধীন সাবভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
রেডক্লিফের কলমের খোঁচা যদি সাড়ে ৩ থানা বাংলাদেশে (তৎকালীন
পাকিস্তানে) যুক্ত হতো তাহলে সিলেট হতো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ অঞ্চল।
বাংলাদেশ সময় ১৯০০ ঘন্টা, জুলাই ০২, ২০১৭
এসএ/


জকিগঞ্জ উপজেলায় ফের ৩য় বারের মতো বন্যা
ReplyDelete