Saturday, June 11, 2016

সমুদ্রে ভেসে বাংলাদেশীর অভিবাসীর অজানা গন্তব্য

হয় ইউরোপ, নয় মৃত্যু------------২

সমুদ্রে ভেসে বাংলাদেশী অভিবাসীর অজানা গন্তব্য

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা:  জোয়ারা ক্যাম্পে এখন বাংলাদেশী ৭০জন সহ সাড়ে ৪শ জনকে একটি নৌকায় তোলা হবে। তার আগে সমুদ্রে বুকপানি পর্যন্ত হেঁটে তোলা হলো একটি স্পিডবোটে। স্পিড বোট তাদের কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি নৌকায় তুলে দেয়। ওই নৌকা ততটা বড় নয়। প্রায় ১০০ জন জায়গা হয় এমন নৌকায় তোলা হয় ৪৫০ জনকে। এখন ডুবু ডুবু অবস্থায় নৌকায় একটি রাডার লাগিয়ে দিয়ে চলে যায় স্পিডবোট।





সাগরে ভাসা শুরু বাংলাদেশের রবিউলদের। ঘন্টার পর ঘন্টা নৌকা ভাসছে ভূমধ্যসাগরে। সাগরের প্রতিটি ঢেউ নিয়ে আসছে মৃত্যুভয় । তবু ইউরোপের স্বপ্নীল জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে বুক বেধে আছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। আশা একটাই এখনই আসবে ইউরোপের কোন উদ্ধারকর্মীরা। এভাবেই ১২ ঘন্টা কেটে গেছে একটি ছোট নৌকায় তারচেয়ে বেশি মানুষ নিয়ে।

হঠাৎ দেখা গেলো রাডার কাজ করছে না। সাগরে ঢেউয়ের ধাক্কায় নৌকায় এদিক ওদিক কাত হচ্ছে। ভয়ার্ত মানুষগুলো তখন মৃত্যুর পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। নির্জন সমুদ্রে কত শত কিলোমিটার দূরে কুল সেটা দেখা যাচ্ছে না। নৌকা যেদিকে টানছে সেদিকেই চলছে। এখানে এর আগে কেইউ এমন বিপদে পড়েননি।

এরকম ক্ষেত্রে সাধারণত ১২ ঘন্টার মধ্যেই উদ্ধার হয়ে যান অভিভাসন প্রত্যাশীরা। ১২ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে কিন্তু সাগরের কোথায় থেকে কোথায় তাদের নিয়ে চলছে নৌকা তার কিছুই তারা টের পাচেছন না।

ইতালির কোস্টগার্ড অভিবাসী দেখলেই উদ্ধারে এগিয়ে আসে- দালালর যাত্রার আগে এমনটি শুনিয়েছে।

এমন অবস্থায় নৌকা ফুটো হয়ে গেছে। পানি উঠা শুরু। একদিকে ঢেউয়ের ধাক্কা অন্যদিকে নৌকায় উঠছে পানি। কান্না শুরু করেছে রবিউলের ছোট ভাই। রবিউল মনে মনে ভাবছে মৃত্যু ছাড়া এখানে আর কোন উপায় নেই। স্রষ্টার নাম জপতে জপতে শেষ মুহুর্ত কি এটি এই ভাবনার মধ্যেই দূর থেকে একটি জাহাজ আসতে দেখে কিছুটা আশা জাগে তাদের।

কিন্তু জাহাজটি কাছে এলেও প্রাণ ভিক্ষা দেয়নি। তিউনেসিয়ার ওই জাহাজটিকে তারা কড়জোরে মিনতি করে শুধু প্রাণটা বাঁচানোর অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে আর দূরে সরিয়ে দিয়ে ফেলে যায় জাহাজটি।

নৌকার যাত্রীরা বলেছিলেন, ‘আমরা ইউরোপ যেতে চাই না শুধু আমাদের প্রাণটা বাঁচান।’ তাও শুনেনি তিউনেসিয়ার সেই জাহাজ।

জাহাজ চলে গেছে বহুদূরে। ডুবে মরা ছাড়া আর পথ দেখছেন না বাংলাদেশী রবিউল, আফ্রিকার নাগরিক যাদের লক্ষ্য ছিলো ইউরোপে পাড়ি জমানো।

বাস্তবে ইউরোপ নয় ইহজগতেই থাকা হচ্ছে না তাদের। এটা এখন মুহুর্তের ব্যাপার যে নৌকাটি উল্টে যাবে আর সমুদ্রে ডুবে হাঙ্গরের পেতে টুকরো টুকরো হবেন তারা।

তাদের কান্না চলে সমুদ্রের বাতাসে ভেসে ভেসে। ভাসছেনা তারাও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে। কিন্তু এখানে বিভিষিকাময় পথের নিশানা পাচ্ছেন কেইউ। মরতেই হবে এমন প্রস্তুতি যেন নিয়েই নিচ্ছে আফ্রিকার মানুষগুলো। রবিউল একবার তাকান তার ভাইয়ের দিকে আরেকবার নৌকায় শক্ত করে ধরেন। ভাইয়ের কান্না থাকছে না। হাঙ্গর ঘিরে ধরে নৌকাটিকে। স্বপ্নে ভয়ের মধ্যে নয় খোলা চোখে হাঙ্গরের পেটে যেন মৃত্যু দেখছেন। মনে মনে এও ভাবছেন, বেঁচে থাকলে শুধু এটাই বলে যেতেন, এপথে যেন আর কেউ পা না বাড়ায়। নির্ঘাত মৃত্যু এখানে। যেখানে ইউরোপ ভুলে শুধু বেঁচে থাকার আকুতি।

হঠাৎ দূর থেকে দুটো সাদা স্পিড বোট দ্রুত গতিতে আসতে দেখেন রবিউলসহ শরনার্থীরা। মাত্র দশ মিনিটে স্পিডবোট দুটে কাছে চলে এসেছে। হ্যান্ড মাইক দিয়ে স্পিডবোট থেকে বলা হয় ‘বসে পড়তে।’ তারা বসে পড়েন। ইতালির কোস্টগার্ড তাদের তখন উদ্ধার করছে।

দুটো বিশাল আকারের স্পিড বোটে তুলে নেয় আর কিছুক্ষণ পরেই হাঙ্গরের ক্ষুধা মেটানোর উপাদান এই মানুষগুলোকে।

এ যাত্রায় বেঁচে যায় রবিউল শত্রুকেও এপথে দিবেন না তিনি। রবিউল হয়তো শেষপর্যন্ত সলিল সমাধির খুব কাছে গিয়েও ফিরে গেছেন ইউরোপে।
কিন্তু ইউরোপে এবার যেতে বাংলাদেশের যবুক আব্দুর রহমান বেছে নিলেন কোন পথ। এক দেশ থেকে আরেক দেশে রাতের আঁধার মাড়িয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে বরফে হিম হয়ে জঙ্গল কেটে কেটে ঢুকতে কি পেরেছিলেন? নাকি কাঁটাতার তার কাটতে গিয়ে জেলে গেছেন।

পরের প্রতিবেদনে থাকছে সাইপ্রাস থেকে বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, অস্ট্রিয়া হয়ে ইতালি যাত্রার দু:সহ যাত্রা…

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ০২ এপ্রিল ২০১৬
এসএ/


No comments:

Post a Comment