আসছে যন্ত্রের শহরে রোমান্টিক হাতপাখা
সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে’- মেঠো রোমান্টিকতার হাতপাখা শীতাতপ যন্ত্রের শহরে বেমানান। কিন্তু চৈত্রের কাঠফাটা রোদ ইটপাথরের রাজধানীতেও হাতপাখা নিয়ে আসে।
যেমনটি দেখা গেলো, চৈত্রের প্রথম সপ্তাহেই রাজধানীতে রিকশাভর্তি তালপাখা নিয়ে ঢুকছেন রিকশাচালক আব্দুল হালিম। অভিজাত এলাকার ফ্লাটবাড়ি ঘেষে চলছে রিকশাবোঝাই হাতপাখার হাতছানি।
এসব তালপাতার পাখা আসছে ঢাকা জেলার ভাটারা ইউনিয়নের ছোলমাইদ থেকে। আর ছোলমাইদে তালপাতা আসছে ময়মনসিংহ থেকে। ছোলমাইদের ঘরে ঘরে একসময় হাতপাখা তৈরী হতো। এখন মাত্র গুটি কয়েক পরিবার হাতপাখা তৈরী করেন। ছোলমাইদ পূর্বপাড়ায় এ গুটিকয়েক পরিবারের বাস।
ছোলমাইদে তৈরী হাতপাখা নিয়ে মাদানী এভিনিউ আমেরিকান সেন্টারের পাশ দিয়ে নতুন বাজার সড়কে উঠেই রাজধানীর হাটের দিকে ছুটছে রিকশা।
রিকশা চালক আব্দুল হালিম জানান, তিনি ছুটছেন নারায়নগঞ্জের দিকে। ঢাকার চকবাজার ও ইমামগঞ্জে হাতপাখা বিক্রি হয়। হাড়িপাতিল, ঝাড়ুর দোকানে দোকানে হাতপাখা দেন তিনি।
তার কাছেই জানা যায়, হাতপাখার গ্রাম ছোলমাইদ । অবশ্য এখন ছোলমাইদে বসবাস করা অনেকেই জানেন না একসময় হাতপাখা তৈরীই ছিলো এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা । রাজধানীর ছোঁয়া পেয়ে বদলে যাওয়া ছোলমাইদে এখন হাতপাখার কারিগর মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন।
জাকির, ছুরুল হক, ইউনুস আলী, খলিল, শাহজাহান- এই কয়েকজনের নাম জানা গেছে হাতপাখার কারিগর হিসেবে। তারা নিজেদের ঘরে হাতপাখা তৈরী করছেন। তাদের ঘরের মহিলারাই সেই পাতপাখা সেলাই করছেন। তারপর তা বিক্রির জন্য তুলে দিচ্ছেন রিকশাবোঝাই করে।
সপ্তাহে আব্দুল হালিম দুই থেকে তিনবার এভাবে রিকশা বোঝাই করে তালপাতার হাতপাখা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রিকশাভাড়া হিসেবে তিনি আটশ থেকে একহাজার টাকা পান।
যে রিকশা নিয়ে তিনি রাজধানীর পথ ধরেছেন সেই রিকশায় ১৪ শ পাখা আছে। সাড়ে ১৮ শ পাখা নেয়া যায় রিকশায়। কাপড় দিয়ে মোড়ানো ১৫শ’ হাতপাখা একটি রিকশায় জায়গা হয়। আর কাপড় ছাড়া ১৮ শ হাতপাখা জায়গা হয়।।
ছোলমাইদের আদি বাসিন্দা হাতপাখার কারিগর জাকির বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার খুব কাছে হলেও বছর দশেক আগে অজোপাড়াগা ছিলো ছোলমাইদ। এখন বিল্ডিং-ফ্লাট হয়ে গেছে এই গ্রামে। তবে তাদের কয়েক পরিবার মাত্র এই আদি পেশায় আছে।
ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে আসা তালপাতা দিয়ে এখানে হাতপাখা তৈরী করেন তারা। কাপড় মোড়ানো হাতপাখা ১৪ টাকা আর কাপড় ছাড়া ১৬ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি হয়। কাপড় ছাড়া যে হাতপাখা সেটি দু’দিকেই নকশা করা থাকে বলে দুইটাকা দাম বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
এসএ/


No comments:
Post a Comment